ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫ , ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতে ব্রাহ্মণপাড়ায় বাড়ছে নিউমোনিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট সময় : ২০২৫-০১-১৪ ০১:০২:৫২
শীতে ব্রাহ্মণপাড়ায় বাড়ছে নিউমোনিয়া শীতে ব্রাহ্মণপাড়ায় বাড়ছে নিউমোনিয়া




 
মোঃ অপু খান চৌধুরী।।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি সাত মাস বয়সী হাসিব। তাকে নেবুলাইজেশন করা হচ্ছে। শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা নিয়ে তাকে ভর্তি করা হয় গত দু'দিন আগে। চিকিৎসক বলছেন শিশু হাসিব নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। 


হাসিবের পাশের বেডে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে ৬ মাস বয়সী শিশু হুজাইফা ইসলাম। তার মা নুরুন্নাহার জানান, চার দিন আগে হুজাইফাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। এর কয়েকদিন আগে তার ঠাণ্ডা লাগে, সঙ্গে জ্বর ও কাশি ছিল। ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে খাইয়েছিলেন। তেমন কোনো আরোগ্য হয়নি। পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে ডাক্তার তাকে ভর্তি রাখার পরামর্শ দেন। প্রতিদিন চারবার তাকে নেবুলাইজ করতে হচ্ছে, সঙ্গে ওষুধ ও ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। তবে এখন তার শারীরিক পরিস্থিতি অনেকটা ভালো। 

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতা বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়ায়। শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া থাকায়, ঘন কুয়াশা ও বায়ু দূষণের কারণে এ সময়টায় নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ সুষম খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। শীতের সময়টায় ঠান্ডা জনিত রোগের সংক্রমণ রোধে পর্যাপ্ত গরম কাপড়, মুখে মাস্ক পরিধান ও নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন। 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, শীত আসার পর থেকে এই হাসপাতালে ডায়রিয়া ও ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতা নিয়ে বেশি রোগী আসছে। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি। শিশুদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুই বেশি। এ সময়টায় ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও দূষিত বাতাসের কারণে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা বাড়ছে। এজন্য ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতাও বাড়ছে। নিউমোনিয়ায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মৃত্যু ঘটে কেবলমাত্র বায়ুদূষণের কারণে।


সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শীতের এই সময়ে সাধারণ রোগীর সংখ্যা কম দেখা গেলেও ঠাণ্ডাজনিত ও ডায়রিয়াজনিত রোগীরা বেশি আসছে চিকিৎসা নিতে। তবে এদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতা নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যাই বেশি। কোনো কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। কোনো কোনো রোগী চিকিৎসাপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে এসব রোগীর মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। 


স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ৩ বছরের শিশু রাফসানের মা তামান্না আক্তার বলেন, আমার ছেলের তীব্র জ্বর এসেছিল, সঙ্গে খুসখুসে কাশি। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ানোর পর জ্বর ভালো হলেও কাশি সারেনি। কয়েকদিনের মধ্যে কাশি আরও বেড়ে যায়। পরে তার আবারও তীব্র জ্বর আসে। এজন্য তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার বলেছেন তার নিউমোনিয়া।

উপজেলা সদরের রোগনির্ণয় কেন্দ্র বি-পাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসা মাহিনের বাবা সাইদুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলের কয়েকদিন ধরে কাশি ও জ্বর। হঠাৎ করে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ডাক্তার তাকে পরীক্ষানিরীক্ষা করে বলেছেন তার নিউমোনিয়া। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে নিতে বলেছে।


আইসিডিডিআর,বি'র তথ্য মতে, বিশ্বজুড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে শীর্ষ পাঁচটি সংক্রমণ রোগের মধ্যে নিউমোনিয়া একটি। দেশে প্রতি ঘন্টায় নিউমোনিয়ায় মারা যায় ২-৩ জন শিশু। বছরে মারা যায় প্রায় ২৪ হাজার শিশু। এজন্য শীতকালে শিশুদের প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখায় পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।


এ ব্যপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, শীতকালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। তিনি আরো বলেন শীতকালে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি থাকে। আদ্রতা কমে যায় এবং বাতাসে ধুলাবালির কণা বৃদ্ধি পায়। ধুলাবালির পাশাপাশি ভাইরাসের বিস্তারও তীব্র হয়। তাই শীতের এ সময়টায় বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ঠাণ্ডা ও দূষিত বাতাসের সংস্পর্শ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। মুখে মাস্ক পরতে হবে এবং পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরাতে হবে। তিনি বলেন, শিশু ও বয়স্কদের কাশি, মাঝারি বা প্রচন্ড জ্বর এবং দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।



 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ